অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মেনে চলুন এই নিয়মগুলো
অ্যান্টিবায়োটিক
ডাঃ মোঃ জাহিদুল ইসলাম


জীবাণু দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছে। অনেক প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। ভবিষ্যতে এই শক্তিশালী জীবাণুর সংক্রমণ মোকাবিলা করাটা কঠিন হয়ে উঠবে। এই সমস্যার জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং ভুল নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের দায়ী। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সময় সাতটি সতর্কতা মেনে চললে আমরা এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি।
১. ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হলেই অনেকেই মেট্রোনিডাজল বা অ্যাজিথ্রোমাইসিনজাতীয় ওষুধ (অ্যান্টিবায়োটিক) সেবন করেন। অথচ বেশিরভাগ ডায়রিয়া এমনিতেই সেরে যায়। বরং ডায়রিয়া রোগীর পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণে বারবার ওরস্যালাইন দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক নয়, ওরস্যালাইনই জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা।
২. সর্দি-কাশি, জ্বর বা গলাব্যথার মতো সাধারণ মৌসুমি রোগে অ্যান্টিবায়োটিক নয়, উপসর্গ উপশমকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। ঘরোয়া উপায়ে পানির সাহায্যে জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে পারেন। মাথায় ভেজা কাপড়ের সেঁক, শরীর মুছে দেওয়া, মাথায় পানি ঢালা, এমনকি গোসল—কোনোটিতেই বাধা নেই। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। গলাব্যথা বা কাশি হলে উষ্ণ পানীয় গ্রহণ করুন। মধু, কালিজিরা, তুলসী—যেটা ইচ্ছে গ্রহণ করুন। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। এসব মৌসুমি জ্বর ভাইরাসজনিত আর অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিপরীতে কাজ করে না।
৩. চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। দোকানদারের পরামর্শে, অন্য কেউ এটা খেয়ে উপকার পেয়েছেন বলে বা আগে চিকিৎসক কখনো এ ধরনের উপসর্গে দিয়েছিলেন বলে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
৪. অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু করলে পুরো মেয়াদ শেষ করতে হবে। মাঝপথে বন্ধ করবেন না। উপসর্গ উপশম হলেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যেতে হবে। আবার একটি অ্যান্টিবায়োটিক চলা অবস্থায় উপশম হতে সময় লাগলে দ্রুত অন্য অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করাও অনুচিত।
৫. একই ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে নানা রোগের কারণে। তাই একজনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক অন্য কেউ সেবন করবেন না।
৬. প্যাকেট খোলার পর অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে বেশি দিন দেরি করবেন না। শিশুদের ক্ষেত্রে একবার অ্যান্টিবায়োটিকের বোতল খোলা হলে পরবর্তীতে অসুস্থ হলে ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া অনুচিত।
৭. সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সব সময় সচেতন থাকুন। নিয়মমাফিক হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার বজায় রাখা, কফ-থুতু এবং ব্যবহৃত টিস্যু ও রুমাল নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, খাবার ঢেকে রাখার মতো ভালো অভ্যাস বজায় রাখুন। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের চেয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশি মনোযোগ দিন।